গঙ্গা দশহরা: একটি মহাপবিত্র তিথি, Ganga Dussehra


গঙ্গা দশহরা: একটি মহাপবিত্র তিথি



বাঙালির পার্বণ ও ধর্মীয় উৎসবের তালিকায় গঙ্গা দশহরা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এটি গঙ্গা নদীর পৃথিবীতে আগমনের স্মৃতিতে পালন করা হয়। এই বিশেষ তিথি হিন্দু ধর্মমতে এক বিশেষ মাহাত্ম্য বহন করে।


ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই পবিত্র তিথিতে দেবী গঙ্গা স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। তাঁর আগমনের ফলে রুক্ষ ও বন্ধ্যা পৃথিবী হয়ে ওঠে শস্যশ্যামলা এবং নবজীবনের স্পন্দনে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে ধরিত্রী। মানুষের হৃদয়ে এক নূতন আশার আলো জেগে ওঠে।


তবে গঙ্গার প্রবাহ ছিল এত প্রবল যে তার উত্থান পৃথিবী ধ্বংস করে দিতে পারত। এই কারণেই দেবতা মহাদেব (শিব) গঙ্গাকে নিজের জটাজুটিতে ধারণ করেন এবং সেখান থেকে ধীরে ধীরে তাকে পৃথিবীতে অবতরণ করান, যাতে পৃথিবীর কোনো ক্ষতি না হয়।

এই তিথির গুরুত্ব এতটাই গভীর যে প্রাচীন শাস্ত্রেও ‘দশহরা’ তিথিকে একটি পূর্ণ তিথি বা পরিপূর্ণ পবিত্র দিন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়, এই দিনে গঙ্গায় স্নান, দান, ও পুণ্যকর্ম করলে জীবনের পাপ দূর হয় এবং পূর্বজন্মের দশটি পাপ পর্যন্ত নাশ হয়।

ধর্মীয় বিশ্বাসে আরও বলা হয়, শুভ কাজের শুরুতে, অশুভ শক্তির বিনাশে এবং পূর্ণ কর্মে সাফল্য লাভের জন্য এই তিথি বিশেষ উপযোগী। গঙ্গা দশহরায় মানুষ গঙ্গায় ডুব স্নান করে, উপবাস পালন করে, ও পূণ্যকর্মে নিজেকে নিয়োজিত রাখে।


গঙ্গা দশহরা শুধু একটি ধর্মীয় তিথি নয়, এটি প্রকৃতি ও ঈশ্বরের আশীর্বাদের এক মহান স্মারক। এটি আমাদের শিখায়—বিশ্বাস, আত্মশুদ্ধি, ও শুদ্ধ জলের গুরুত্ব কত গভীরভাবে আমাদের জীবনে গাঁথা। আজও এই তিথি আমাদের মনে করিয়ে দেয় প্রাচীন ভারতের আধ্যাত্মিক ধারাকে এবং জীবনের প্রতি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গিকে।

Comments