Bengali Meaning of Dream Children: A Reverie by Charles Lamb


 Bengali Meaning  of Dream Children: A Reverie


শিশুরা সবসময়ই বড়দের ছেলেবেলার গল্প শুনতে ভালোবাসে। তাদের কল্পনার পাখা মেলে উড়ে চলে সেই মানুষগুলোর কাছে, যাদের তারা কখনো চোখে দেখেনি—যেমন কাকা কিংবা বৃদ্ধ ঠাকুমা। এক সন্ধ্যায়, আমার দুই শিশু—অ্যালিস ও জন—আমাকে ঘিরে ধরল। তারা জানতে চাইল তাদের বড়োমা, শ্রীমতি ফিল্ডের কথা।

নরফোকের এক বিশাল প্রাসাদে থাকতেন শ্রীমতি ফিল্ড, যা আমার বাবার বাড়ির চেয়ে অনেক বড়, অনেক গুণ বিস্ময়কর। তখনকার দিনে অনেকেই বিশ্বাস করতেন, ‘চিলড্রেন ইন দ্য উড’-ব্যালাডের করুণ ঘটনাটি এই অঞ্চলে ঘটেছিল। ঐ প্রাসাদের হলঘরের কাঠের চিমনিপটে একসময় সেই গল্পের চিত্রশৈলী খোদাই করা ছিল। মার্বেলের নতুন সাজসজ্জা আসার আগে পর্যন্ত রবিন রেডব্রেস্ট-সহ সব গল্প যেন সেই কাঠেই প্রাণ পেয়েছিল। এখন আধুনিক ছবিতে সেই জাদু আর নেই।

অ্যালিস মায়ের মতো কোমল চোখে তাকাল, তার অনুভূতির প্রকাশ ছিল গভীর। আমি বলতে লাগলাম—তার বড়োমা ফিল্ড কতটা ধার্মিক, মহীয়সী ও শ্রদ্ধেয় ছিলেন। যদিও তিনি ঐ প্রাসাদের প্রকৃত মালিক ছিলেন না, কেবল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন, তবুও তিনি এমনভাবে বাস করতেন যেন সেটাই তাঁর নিজস্ব গৃহ। প্রকৃত মালিক পাশের অঞ্চলে এক বিলাসবহুল নতুন প্রাসাদ কিনেছিলেন। পুরোনো ঐতিহ্যের সব অলঙ্কার, সাজসজ্জা একে একে স্থানান্তরিত হলো নতুন গৃহে, আর পুরাতন প্রাসাদটি হয়ে উঠল এক নির্জন, ভুতুড়ে স্মৃতি।

জন তখন হেসে বলে উঠল—“এটা নিছকই বোকামি।” আমি তখন বলি—যে শ্রীমতি ফিল্ডের মৃত্যুতে আশেপাশের গ্রামের গরিব মানুষ থেকে শুরু করে শহরের সম্ভ্রান্তরাও যোগ দিয়েছিলেন তাঁর অন্তিম যাত্রায়। তিনি ছিলেন এতটাই ধর্মপ্রাণা যে বাইবেলের বড় বড় অংশ তাঁর মুখস্থ ছিল।

এই কথা শুনে ছোট অ্যালিস কিছুটা অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে হাত প্রসারিত করল। আমি স্মরণ করালাম—তাঁর যৌবনে তিনি ছিলেন এক লাবণ্যময়ী ও খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী। অ্যালিস তখন নিজের পা দোলাতে থাকে, যতক্ষণ না আমি কঠোরভাবে তাকিয়ে তাকে থামালাম। আমি জানালাম—ক্যানসারের কবলে পড়ে তিনি চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু তাঁর মনোবল কখনো ভাঙেনি।

তিনি রাতে ঘুমাতেন প্রাসাদের এক নির্জন ঘরে, আর বিশ্বাস করতেন—সেই ঘরে মাঝেমধ্যে ‘চিলড্রেন ইন দ্য উড’ ব্যালাডের শিশুরা ছায়ারূপে দেখা দিত। কিন্তু তাঁরা তাঁকে কোনো ক্ষতি করতো না। আমি নিজে কখনও তাদের দেখিনি, তবে বড়োমার সাহস ও বিশ্বাস আমাকে বিস্মিত করত।

ছুটির দিনে আমরা যখন সেখানে যেতাম, তিনি আমাদের যত্নে রাখতেন, আর আমি বহু ঘণ্টা বসে থাকতাম রোমের সম্রাটদের মার্বেলের মূর্তির দিকে চেয়ে। মনে হতো, যেন তারাও আমার সঙ্গী হয়ে গেছে। আমি কখনও ক্লান্ত হতাম না ঐ বিশাল বাড়িতে ঘুরে বেড়িয়ে, যেখানে পুরনো পর্দা, কাঠের প্যানেল আর প্রাচীন বাগান এক অদ্ভুত সৌন্দর্যে ভরা ছিল।

ওই বাগানে নানা ধরনের ফল জন্মাত, কিন্তু আমি কখনো নিষিদ্ধ পীচফল ছুঁতাম না। বরং আমি আরও বেশি ভালোবাসতাম ইউ-গাছ আর ফার গাছের ছায়ায় ঘুরে বেড়াতে। মাঝে মাঝে লেবু গাছের নিচে শুয়ে পড়তাম, যেন লেবুদের উষ্ণতার অংশ হয়ে গেছি। আর ছিল পুকুরের টাটকা মাছ—সেই আনন্দ পীচফল বা লেবুর চেয়েও বেশি ছিল আমার কাছে।

আমি বললাম—বড়োমা সব নাতিনাতনিকে সমানভাবে ভালোবাসতেন, তবে কাকা জন এল-কে কিছুটা বেশি স্নেহ করতেন। তিনি ছিলেন সুদর্শন, সাহসী ও উদ্যমী—আমাদের সকলের মধ্যে যেন রাজপুত্র। ছোটবেলায় একবার আমি খোঁড়া হয়ে গেলে তিনিই আমায় পিঠে করে বয়ে নিয়ে বেড়াতেন। অথচ পরে, যখন তিনিই পঙ্গু হয়ে গেলেন, আমি একবারও তাঁর কষ্ট বুঝিনি, তাঁর প্রতি সহানুভূতি দেখাইনি।

যখন তিনি মারা গেলেন, আমি কাঁদিনি। এমনকি তখনও আমি বুঝিনি, তাঁকে কতটা ভালোবাসতাম। মৃত্যুর পরে আমি উপলব্ধি করি—তাঁকে হারানো মানেই নিজের এক টুকরো হারিয়ে ফেলা।

শিশুরা তখন কেঁদে উঠল, অনুনয় করল আমি যেন কাকার যন্ত্রণার কথা না বলি। বরং তাদের মায়ের গল্প বলি। আমি বললাম—আমি কীভাবে সাত বছর ধরে ভালোবেসেছিলাম সুন্দরী অ্যালিস ডব্লিউ-এন-কে, তাদের মা। আমি বোঝাতে চাইলাম—একজন অবিবাহিত নারীর লজ্জা, সংকোচ ও নিষেধ কীভাবে প্রেমের প্রকাশকে কঠিন করে তোলে।

ছোট অ্যালিসের চোখের দৃষ্টিতে এমন কিছু ছিল যা আমাকে দ্বিধায় ফেলে দিল—আমি ভাবলাম, সত্যিই তো, কারা আমার সামনে বসে আছে? তারা কি আমার সন্তান? নাকি কেবল কল্পনা?

তখনই চারপাশের দৃশ্য মুছে যেতে লাগল, শিশুরা আবছা হয়ে মিলিয়ে গেল কোথায় যেন। দূর থেকে ভেসে এল দুটি বিষণ্ণ প্রতিমার কণ্ঠ—“আমরা অ্যালিসের সন্তান নই, তোমারও সন্তান নই। আমরা শিশু নই, আমাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। আমরা স্বপ্ন।”

এই কথায় আমার ঘুম ভেঙে গেল। আমি ফিরে এলাম সেই একা, পরিচিত আরাম কেদারায়। পাশে পড়ে আছে বই। জন বা জেমস ইলিয়া, কেউ নেই, কেউ কোনোদিন ছিলও না।



Comments